তিন শব্দের ছোট্ট একটা শব্দ জীবন।অথচ এই জীবনে রয়েছে কতো রকমের বৈচিত্রতা।জীবন যেনো এক জোয়ার ভাটার মতো।কখনো উচ্ছাস আবার কখনো দীর্ঘশ্বাস কিংবা তুফানের মতো নানান রকমের দুঃখ কষ্টের নামই জীবন।তবুও এসব চাপিয়ে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নামই জীবন।আর এটাই জীবনের মূল উপলক্ষ হওয়া উচিত।
যাতনার কারণে কষ্ট আসতে পারে নানান ধরনের রোগ নিয়ে।সাধারণত কারো দ্বারা অপমানিত হওয়া,কোনো বন্ধু কর্তৃক প্রতারিত হওয়া,কিংবা প্রিয় কোনো ব্যক্তি আকস্মিক ছেড়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় থেকে মানুষের কষ্ট ও মানসিক চাপের উদ্রেক হয়ে থাকে।এসব বিষয়ে যারা ভুক্তভোগী কেবল তারাই বুঝতে পারেন এর যন্ত্রণা কি অসহনীয়!
অতি দ্রুত কষ্ট বা মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠার জন্য বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।এগুলো মেনে চললে আপনি তাড়াতাড়ি কষ্ট থেকে মক্তি পেতে পারেন।
অবসর নিনঃ
অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে অনেক সময় কষ্টের বা মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে।তাই কাজের চাপ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।যদি প্রয়োজন হয় সাধারণ কাজের রুটিন থেকেও অবসর নিন।নিজেকে সময় দিন।পারলে কিছু দিনের জন্য জায়গা পরিবর্তন করুন।
সাধারণত কেউ কোনো কষ্টে পতিত হওয়ার পর মস্তিষ্কে মূল তাড়ানা থাকে প্রয়োজনীয় হরমোন ক্ষরণ করে কষ্টানুভূতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা।যার ফলে কোনো কাজে মনযোগ দেয়া বা মন না বসাটা স্বাভাবিক।মন না বসা সত্বেও জোর করে কোনো কাজ করতে যাওয়া শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর।তাছাড়া সামান্য পরিমাণ অবসর আপনার মানসিক চাপ এবং কষ্ট দূর করতে প্রয়োজনীয় লজিক সঞ্চয় করবে।কাজেই কষ্ট দূর করতে বা মানসিক চাপ থেকে রেহাই পেতে অবসর নিন।
কেঁদে নিনঃ
কান্না হলো সকল কষ্ট দূর করার অন্যতম অস্ত্র এবং কষ্ট দূর করার সবচেয়ে ফলপ্রসূ মাধ্যম।কোথাও কোনো কষ্ট পেলে কান্না আটকে রেখে নিজেকে শক্ত প্রমাণের চেষ্টা করবেন না।বরং কোথাও আড়ালে গিয়ে চোখের পানি ছেড়ে কান্না করে দিন।
অনেকে নিজেকে শক্ত প্রমাণের জন্য পাহাড়সম কষ্ট চেপে রেখে কান্না না করে আত্মমগ্ন হয়ে নিজেকে নিজের ভিতরেই কান্না চেপে ধরে রাখেন।এতে যেমন কষ্ট বাড়ে তেমনই মানসিক চাপও বাড়তে থাকে।
পক্ষান্তরে কান্না মুঠেও দুর্বলতার লক্ষণ নয়।কান্না করুন তারপর দেখুন নিজেকে কতোটা হালকা লাগে।তাই নিজেকে রিলাক্স রাখতে গলা ছেড়ে দিয়ে কান্না করুন।
মাদক পরিহার করুনঃ
অনেক কষ্টে পতিত হলে মাদক জাতীয় দ্রব্য সেবন করে।যেমন সিগারেট,নেশা জাতীয় পানি বা অন্যান্য জিনিস।বস্তুত এসব জিনিস সেবনের ফলে সাময়িক সময়ের জন্য মাদকের মাদকতা বিষণ্ণতা দূর করতে সক্ষম হয়।কিন্তু মাদকের নেশা কেটে গেলে সবই আগের মতো হয়ে যায়।বাস্তবতা থেকে পলায়ন প্রবণ হয়ে নেশা দ্রব্যের উপর নির্ভর হয়ে পড়া থেকে বিরত থাকুন।আপনার শরীরটাকে স্বাভাবিক প্রতিসারণ নিতে দিন।
মানব জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত দুঃখ কষ্ট যেমন আছে তেমনি এগুলো সাথে লড়াই করার জন্যও শরীরের যথেষ্ট যান্ত্রিক ব্যবস্থাও আছে।জীবনের কষ্ট দূর করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের নিঃসরণ রয়েছে যা স্নায়ু কোষের নির্দিষ্ট পদ্ধতি।
মাদকদ্রব্যের সেবনের ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মারাত্মক ব্যঘাত ঘটে।কারণ নেশা গ্রস্থ মানুষ মাত্রই অসুস্থ।তাই বিষন্নতা দূর করতে বা কষ্টের সময় মাদক সেবন থেকে দূরে থাকুন।সাময়িক যাতনার জন্য অসুস্থ হয়ে যাওয়াটা অনুচিত।
ক্ষমা করুনঃ
কোনো ঘটনার জন্য নিজেকে লাগাতার দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন।যদিও আপনি দোষ করে ফেলেন তবে সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হোন যাতে এমন ঘটনা পুনরায় না হয়।
মনে রাখবেন যা হয়েগেছে তা হয়েগেছে।তা আপনি চাইলেও বদলাতে পারবেন না বরং যা সামনে হতে চলছে তার জন্য প্রস্তুতি নিন।নিজে নিজেকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
নিজেকে ক্ষমা করুন।একই সাথে ক্ষমা করুন অন্যকেও।কারো উপর রাগ যতোই চেপে ধরবেন ততোই আপনার কষ্টের সীমা বাড়তে থাকবে।আর যদি ক্ষমা নাই করতে পারেন তবে তাদের তুচ্ছজ্ঞান করুন।নিজেকে পীড়া দেয় এমন মানুষদেরকে মন থেকে বের করে দিন।তাতে কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।
মানুষের পাশে দাঁড়ানঃ
এটা সত্য যে আপনার মতো হাজারো মানুষ কষ্টে নিপাতিত রয়েছে।তাদের বেশিরভাগের তুলনায় হয়তো আপনার কষ্টটা কিছুই না।পারলে লেগে যান মানুষের সেবায়।এতে করে নিজের প্রতি কোনো গ্লানি থাকলে তা মানুষকে সাহায্য করার নিমিত্তে আপনাকে শান্তি ও মানসিক প্রশান্তি এনে দিবে।মনে রাখবেন,সুখ ভাগাভাগিতে বাড়ে আর দুঃখ ভাগাভাগিতে কমে।
সাহায্য নিনঃ
কেউ মনের দিক দিয়ে যতোই শক্ত হোক না কেনো সেও কষ্টের মুহূর্তে একটু সাহায্য চায়।অনন্ত মন উজাড় করে কথা বলতে পারার মতো একজন মানুষ।একজন ভালো শ্রোতা এসময় খুবই জরুরি।
চেষ্টা করুন মানুষের সাথে মন খুলে কথা বলার।বেশি বেশি মানুষের সাথে মিশুন।প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কারোর সাহায্য নিন।যে কোনো প্রশ্ন না করে নিরবে আপনার সকল কথা শুনে যাবে।আর যদি এমন কেউ না থাকে তবে কেনো সাইকোলজিস্টের কাছে যান গিয়ে সমস্যা সব খুলে বলুন।
গল্প বা উপন্যাসের বই পড়ার মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের অস্তিত্বকে কিছু সময়ের জন্য সস্তি দিতে পারা যায়।ভিন্ন ভিন্ন কল্পকাহিনি আপনার কল্পনা জগতকে সচল করে নতুন করে আশাবাদি করে তুলবে।
লেখালেখি পড়ার চেয়েও বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে মানসিক চাপ বা কষ্ট দূর করতে।আপনার মনে জমে থাকা কষ্টের কারণটি বা চাপের কারণটি সাদা কাগজের উপর কলম ধরে লিখতে শুরু করে দিন।এতে করে দেখবেন মন আশ্চর্য রকমে দ্রুত হালকা হতে শরু করবে।এমনকি বন্ধুর মতো কাগজ আপনার কথাগুলো শুনতে থাকবে।আপনার চাপা অনুভূতিগুলো সুন্দর করে বের করে আনবে খাতা এবং কলম।
সর্বোপরি নিজেকে সময় দিন।সময় সব ক্ষত সারিয়ে তুলবে।আজকের যে অনুভূতিগুলো কষ্টের কারণ বা চাপের কারণ একসময় সেই অনুভূতিগুলোই আর থাকবে না।ধৈর্য রাখেন।স্রষ্টার নিকট নিরবে প্রার্থনা করুন।সময়ের চক্রে আপনিও আপনার চাপ বা কষ্ট থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন।
