আত্মউন্নয়নমূলক বইঃ
যার আক্ষরিক অর্থ হলো আত্মার উন্নতি সাধিত হয় যে বইয়ের দ্বারা সে সকল বইকেই আমরা আত্মউন্নয়নমূলক বই বলে থাকি।
সকলেই চায় তার আত্মার উন্নতি ঘটুক।কিন্তু অনেকে অনেক সময় সঠিক পাথেয়ও বা নির্দেশনা না পাওয়ার অভাবে আত্মার বিকাশ যথাযথ ঘটাতে পারেন না।
জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই।তবে বই পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বইয়ের গুণগত মান সবসময়ই বিবেচ্য।এমন বই পড়া আবশ্যক যে বই পড়ার মাধ্যমে জীবনের গতিপথ বদলিয়ে ফেলতে সচেষ্ট।
আজ এমন দুটি বইয়ের সারাংশ তুলে ধরবো যেগুলো পড়ার মধ্য দিয়ে নিজের আত্মাকে খুঁজে পাবেন এবং কিভাবে বাস্তব জীবনে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠার পাশাপাশি আত্মার উন্নতি ঘটানো যায় তার সফল উদাহরণ ও বিশ্লেষণ।
(এবং বই দু'টির PDF Download লিংক নিচে দেওয়া হয়েছে)
প্রথমেই বলবো ডেল কার্নেগীর
How to win friends and influence people বইয়ের কথা।
বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয় হয়।কিন্তু সবার সাথে কথা বলে আমরা অন্যকে প্রভাবিত করতে পারি না।কীভাবে অন্যের সাথে গুছিয়ে কথা বলবেন,অন্যকে প্রভাবিত করবেন সেসব বিষয়ই উক্ত বইয়ে চমৎকারভাবে আলোচনা করা হয়েছে।অন্যকে নিজের আয়ত্তে আনতে চাইলে আমরা ছোট্ট ছোট্ট কিছু কায়দা অনুসরণ করতে পারি।তাই মানুষকে কথায় জয় করতে চাইলে বইটি আপনার অবশ্যই পড়া উচিত।
অন্যকে প্রভাবিত করতে বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আলোচ্য সূচির সূচনা দেখে নেয়া যাক।
- প্রথমে অন্যের প্রতি আগ্রহী হতে হবে,তারপর বন্ধুত্ত্ব অর্জিত হবে।
- আমরা অন্যের সমালোচনা ঠিকই করি,কিন্তু নিজেরটা করি না।তাই নিজের সমালোচনা নিজেকেই করতে হবে।
- সবসময় অন্যের প্রশংসা করা,তবে তোষামোদ নয়।
- অন্যকে চলার পথে সঙ্গী করা।
- অন্যকে দিয়ে কাজ করানোর আগে তাকে সেই কাজে আগ্রহী করে তোলা।চাহিদা তৈরি করতে হবে।
- সবসময় হাসিমুখে অন্যের সাথে কথা বলতে হবে।
- সবসময় পসিটিভ চিন্তা করুন,আপনার চিন্তাই কাজে পরিণত হবে।
- সবসময় অন্যের নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন।প্রত্যেকে তাদের নিজের নামকে ভালোবাসে।
- একজন ভালো মনোযোগী শ্রোতা হলেই মানুষ আপনার প্রতি খুশি হবে,আগ্রহী হবে।
- অন্যের সাথে উৎসাহ নিয়ে সবসময় কথা বলুন।
- আপনি যার সাথে কথা বলবেন,সে অবশ্যই কোনো না কোনো বিষয়ে শ্রেষ্ঠ-তাই তাকে শ্রেষ্ঠত্ত্বের মর্যাদা দিতে হবে।অপর ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার সু্যোগ দিতে হবে।
- কখনো তর্ক করে জিততে চাইবেন না।পারলে হেরে যান তবুও তর্ক জিনিসটা এড়িয়ে চলুন। তর্কে জেতার সহজ উপায় হলো তর্কে হেরে যাওয়া।
- কাউকে কিছু বুঝাইতে চাইলে এমনভাবে কাজটি করতে হবে যেন সে না বুঝে যে আপনি তাকে বুঝাচ্ছেন।
- কেউ ভুল করলে সেটি সরাসরি না বলাই ভালো।অপরের মতামতের প্রতি সম্মান দিবেন
- কখনো ভুল করলে সেটি স্বীকার করুন।এতে আপনি লজ্জিত হবেন না বরং বরণীয় হয়ে ওঠবেন।
- মানুষকে নিজের আয়ত্তে আনতে হলে বন্ধুত্ত্বপূর্ণ ব্যবহার দিয়েই শুরু করবেন।
- মানুষের সাথে কথা বলা শুরু করলে প্রথমেই যে বিষয়টির সাথে অপর ব্যক্তিটির মিল থাকবে সেটি দিয়েই শুরু করবেন।যেসব ব্যাপারে আপনার মতের মিল হবে না সেগুলো দিয়ে কথাবার্তা শুরু করবেন না।
- কথা বললে হ্যাঁ দিয়েই শুরু করবেন।সহজেই অন্যকে আয়ত্ত করতে পারবেন।
- অপর দিক থেকেই বেশি কথা বলতে দিবেন।নিজে কথা কম বলবেন।
- আপনার মতামত না দিয়ে অন্যকে মতামত দিতে সু্যোগ দিবেন এবং সেই মতামতের মাধ্যমেই অপরকে আয়ত্ত্ব করতে পারবেন।
- অন্যের খারাপ ব্যবহারের কারণ খুঁজে বের করুন।তার জায়গায় আপনাকে রেখে একটু ভেবে দেখুন অর্থাৎ আন্তরিকভাবে অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করুন।
- অন্যকে নিজের আয়ত্তাধীন করতে চাইলে অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেই ফেলুন।
- অপরের মহত্ত্বের প্রতি আবেদন রাখুন,আপনার ভাবনাকে আরোও নাটকীয় করে তুলুন।
- যদি সুখী হতে চান তাহলে সঙ্গীকে অধিকার করার চেষ্টা করবেন না।
লেখক বইটিতে আরো বলেছেন,কেউ যেনো বইটি পড়ে রেখে না দেয়।বরং পড়া শেষ হলেও বারবার বইটি পড়তে থাকা।এতে করে বইয়ের নিয়মগুলো ধীরে ধীরে চর্চা হয়ে উঠবে।তাই বইটি এখনও না পড়ে থাকলে পড়া শুরু করতে পারেন।
বলছিলাম রোমানিয়ান দার্শনিক মির্চা এলিয়াদের লেখা বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক রোমাঞ্চকর উপন্যাস 'লা নুই বেঙ্গলী'বইয়ের কথা।
বইটি প্রথমে ১৯৩৩ সালে রোমানিয়ান ভাষায় 'মৈত্রেয়ী' নামে প্রকাশিত হয়।১৯৫০ সালে ফরাসী ভাষায় 'লা নুই বেঙ্গলী'(বাঙ্গলার রাত) নামে প্রকাশিত হবার পর উপন্যাসটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
মৈত্রেয়ী দেবী ১৯৩৮-৩৯ সালে বইটি সম্পর্কে জানতে পারেন তার বাবার মাধ্যমে।এরপর তিনি এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন বইটিতে মির্চা তাদের শারিরীক সম্পর্কের কথা লিখেছেন।এরপর তিনি ফরাসী ভাষা থেকে অনুবাদ করে বইটি পড়েন।
১৯৭৩ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর একটা বক্তৃতা দিতে গেলে,সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক মির্চা এলিয়াদের সাথে দেখা করেন।তিনি মির্চাকে এই মিথ্যাচারের কারণ জিজ্ঞাসা করেন।মির্চা তাকে কথা দেন,তার মৃত্যুর পর তিনি বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করবেন।
১৯৯৪ সালে মৈত্রেয়ী দেবীর মৃত্যুর চার বছর পর বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়।
যদিও উপন্যাসে মৈত্রেয়ীর বাবাকে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখানো হয়েছে।কিন্তু মৈত্রেয়ীর বাবা সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ছিলেন একজন অধ্যাপক। মির্চা এলিয়াদ ছিল তার প্রিয় ছাত্র।তিনি তার সেই প্রিয় ছাত্রটির বাড়িতে রেখেছিলেন তার সাথে মৈত্রেয়ীকে পরিচিত করেছিলেন ইউরোপীয়ান ভাষা এবং সংস্কৃতি শেখানোর জন্য।
মির্চা এলিয়াদ ১৯২৯ সালে ভারতবর্ষে থাকাকালীন সময়ে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং ভারতবর্ষের মানুষ এবং ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণা চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন। বলতেই হবে এটি মির্চা এলিয়াদের নিজের জীবনের ঘটনা। মির্চা এলিয়াদ নিজেই এই উপন্যাসের নায়ক। যার নাম তিনি উপন্যাসে দিয়েছেন অ্যালেন।
উপন্যাসের মির্চা এলিয়াদ একজন ইউরোপীয় শেতাঙ্গ।কাজের সূত্রে তিনি ভারতে আসেন। পুরো বইতে মির্চা এলিয়াদ তার নিজের পারিবারিক পরিচিতি তুলে ধরেননি।ভারতে হেরল্ড নামে একজন এ্যাংলো ইন্ডিয়ান বন্ধু এবং কিছু ইউরোপীয়ন বান্ধবীর কথা উপন্যাসে বর্ণনা করেছেন।
ভারতবর্ষে কাজের সূত্রে পরিচয় হয় তারই কর্মক্ষেত্রের ঊর্ধ্বতন একজন ভারতীয় অভিজাত নরেন্দ্র সেনের সঙ্গে।নরেন্দ্র সেন অ্যালেনকে(লেখক) তার কাজ আর নম্রতার জন্য পছন্দ করতেন।
একবার জলাবদ্ধ জায়গায় অফিসের কাজ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন অ্যালেন।নরেন্দ্র সেন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করে তোলেন।এরপর নরেন্দ্র সেন তাকে প্রস্তাব দেন তার বাসায় থাকার জন্য।কারণ হিসেবে অ্যালেনের সুস্থ থাকা এবং তার মেয়ের পাশ্চাত্য কালচার শেখের বিষয়টি তুলে ধরেন।
অ্যালেনের সাথে উপন্যাসের নায়িকা নরেন্দ্র সেনের মেয়ে মৈত্রেয়ীর প্রথম দেখা হয় তাদের বাড়িতে ওঠার আগেই,একটি লাইব্রেরিতে। নরেন্দ্র সেন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ের সাথে।লেখক মৈত্রেয়ীকে বর্ণনা করেছেন যৌবনদীপ্ত একজন পরিপূর্ণ যুবকের দৃষ্টিতে এবং একই সাথে ইউরোপীয়রা ভারতীয় নারীদের যেভাবে দেখে থাকেন তেমনভাবে।
লেখকের বর্ণনায় ইউরোপীয়দের কিছু বিষয় ফুটে উঠেছে।তারা যে কিছুক্ষেত্রে বর্তমান ভারতীয়দের মতো ভিন্নমতাবলম্বী, ভিন্নবিশ্বাসীদের নিয়ে বিদ্রুপ করতেন তা লেখক অকপটে তুলে ধরেছেন।
লেখকের ইউরোপীয়ান বন্ধুরা ভারতীয়রের গায়ের রং,লোকাচার,ভারতীয় নারী-পুরুষ,ভারতীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি এবং ধর্ম নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন সেটা থেকে অনুমান করা যায়,উন্নত জীবন যাপন করলেও তখনো তাদের মনের দৈন্যতা এবং সঙ্কীর্ণতা কাটেনি।লেখক যখন আর্থিক দৈন্যদশায় তার ইউরোপীয়ান বন্ধু হেরল্ডের কাছে কয়েকদিনের জন্য আশ্রয় চেয়েছিলেন,সেই বন্ধু তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান।কারণ লেখক এখন আর খ্রিস্টান নেই,পৌত্তলিক হয়ে গেছেন।কিন্তু আসল কারণ হলো লেখকের কাছে টাকা নেই তাই।এমন তরো কুসংস্কার আর হীনমন্যতা ইউরোপীয়ানদের মধ্যেও ছিল।
অথচ একই সংস্কৃতির ধারক হয়েও লেখক ভারতীয় মাটি, মানুষ এবং সংস্কৃতিকে ভালোবেসেছিলেন।শেষ পর্যন্তও তিনি টিকে থাকতে চেস্টা করেছেন ভারতের মাটি আকড়ে ধরে। কিন্তু জীবনযুদ্ধের এক পর্যায়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি ভারত ছেড়েছেন।ভারতের বৈষ্ণব সাহিত্য, চৈতন্যদেবের প্রেম এবং ভারতীয়,সংস্কৃতিতে তিনি মুগ্ধ হতেন।
কলকাতার ভবানীপুরে নরেন্দ্র সেনের বাড়িতে লেখক মীর্চা এলিয়াদের দিনগুলো ভালোই কাটছিল।নরেন্দ্র সেন একজন সাহিত্যনুরাগী মানুষ।তার লাইব্রেরির সংগ্রহশালায় চার হাজারের মতো বই ছিল।ব্যক্তিজীবনে একজন রুচিশীল,অভিজাত এবং পাশ্চাত্যনুরাগী ভারতীয় ছিলেন নরেন্দ্র সেন।দুই মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে তার পরিবার।এছাড়া বাড়িতে দুই তিনজন আশ্রিত থাকতো।
নরেন্দ্র সেন লেখককে বলে দিলেন তার মেয়েকে ফরাসী ভাষা শেখাতে।বিনিময়ে মৈত্রেয়ী তাকে বাংলা শেখাবে।মৈত্রেয়ী একজন সংস্কৃতিমনা মেয়ে।শ্যামলা সুঠাম দেহের অধিকারী মৈত্রেয়ীর বয়স তখন ১৬ বছর।সে কবিতা লেখে,গান গায়,গল্প উপন্যাস পড়ে।আর রবীন্দ্রনাথের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত।বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ তার কাছে আধ্যাত্মিক পুরুষ যাকে ভক্তিভরে ভালোবাসা যায়।আর মৈত্রেয়ীও তার স্নেহধন্য।
লেখক আর মৈত্রেয়ীর বন্ধুত্ব ভাষা শেখা দিয়ে শুরু।তবে লেখকের প্রতি মৈত্রেয়ীর বাবা - মায়ের বাৎসল্য দেখে লেখকের একাধিক বার সন্দেহ হয়েছে,মৈত্রেয়ীর বাবা- মা তার সাথে মৈত্রেয়ীর বিয়ে দেবার পরিকল্পনা করছেন হয়তো! যদিও পরে মৈত্রেয়ীর কাছে জানতে পারেন,তাদের উদ্দেশ্য লেখককে দত্তক নেয়া এবং লেখকের দেশ ফ্রান্সে পরিবার নিয়ে চলে যাওয়া। কারণ ওসব দেশে ভারতের মতো কোন সংঘাত নেই।
ধীরে ধীরে লেখক নানানভাবে মৈত্রেয়ীর প্রতি তার ভালোবাসা,প্রেম,সখ্যতা অনুভব করেন। সেইসব মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি লেখক নির্মোহভাবে তুলে ধরেছেন।
উপন্যাসটি পড়ার সময় এমন মনে হবে যে লেখক যেনো ঝরঝরে গদ্যে বলে যাচ্ছেন তার সাথে ঘটা সেইসব দিনের গল্প।কোথাও কোনো অতিরঞ্জন মনে হবেনি।এমনকি মৈত্রেয়ীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা প্রকাশ করেছেন শৈল্পিক পরিমিতিবোধ থেকে।যদিও মৈত্রেয়ী দেবী এটি অস্বীকার করেছেন এবং এই মিথ্যাচারের জন্য মির্চা এলিয়াদকে প্রশ্নও করেছিলেন।
তবে মির্চা এলিয়াদকে অনেকাংশেই মনে হবে বাঙালি প্রেমিকদের মতো।যারা তার প্রেমাস্পদকে নিজের করে আগলে রাখতে চান।পছন্দের মানুষের জীবনের অতীত এবং বর্তমানে কোন পুরুষ আনাগোনা সহ্য করতে পারেন না।মির্চা নিজে যদিও ইউরোপীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত,একাধিক মেয়ের সাথে সময় কাটিয়েছে।তবে তার ইচ্ছে সে এমন ময়েকে বিয়ে করবে যে আগে কখনো প্রেম করেনি,একেবারে পূতপবিত্র।যদিও লেখককে আমার সংস্কারমুক্ত মনে হয়েছে।বিশেষ করে যখন সে মৈত্রেয়ীকে পাবার জন্য ধর্মান্তরিত হবার চিন্তা করছিল এবং প্রায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল।
এখন আসা যাক মৈত্রেয়ীর বাবা মায়ের প্রসঙ্গে। অনেক আধুনিক জীবনযাপন করলেও তারা ধর্মীয় গোড়ামিমুক্ত হতে পারেনি।তবে ধর্মের চেয়ে সমাজ নিন্দার ভয় ছিল তাদের বেশি। কারণ নিজেদের ছেলেসন্তান না থাকায় যে ছেলেটিকে তারা দত্তক নেয়ার কথা ভাবছিল, সেই ছেলেটি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে মেয়ের জামাই হলে অসুবিধা থাকার তো কথা নয়। কিন্তু সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমাজ এবং মানুষ প্রস্তুত ছিল না একজন ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়া হলে জাত চলে যাবে,এমনই ছিল সে সময়কারের চিন্তাভাবনা
আর তাছাড়া মৈত্রেয়ীর সাথে মির্চার সম্পর্কের ফলে যে পাপ হবে তা তাদের পরিবারের উপর এসে পড়বে এমন একটা কুসংস্কার তারা লালন করেছিল। মৈত্রেয়ীর মা তুলনামূলক বেশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন।মৈত্রেয়ী যখন গল্পচ্ছলে মীর্চা এলিয়াদের(লেখক) ধর্মান্তরিত হবার কথা বলেছিল তখন তা মা এটিকে সুনজরে দেখাননি। বরং কিছু মনগড়া ধর্মীয় তাত্ত্বিক আলাপ করেছিল।লেখক কঠিন সারল্যে তার সেইসব দিনের বিরহগাঁথা তুলে ধরেছেন।
জীবনে ২য় নারী হয়ে জেনি আইজাক তার জীবনে এলেও লেখক ভুলতে পারেননি মৈত্রেয়ীকে।সত্যিকারের ভালোবাসা যেমন ভুলা যায় না,তেমনি ভালোবাসা না পেলেও বাঁচা যায় না।তাই লেখক পরে তার ইউরোপীয়ান বান্ধবী গারতির কাছেও ফিরে গেছেন করুণ অসহায়তায়।
ভারতবর্ষে ইংরেজদের শাসন এবং হিপোক্রেসি সম্পর্কেও লেখক তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। পড়ার সময় মির্চাকে একটু সময়ের জন্যেও ভিনদেশি মনে হবে না।মনে হবে আমাদের কাছের কেউ যে আমাদের সমাজের এই বাঁধার দেয়ালে মাথা ঠুকে ব্যর্থ হয়ে কলমের বিষাদে আশ্রয় নিয়েছেন।বলে গেছেন আপনমনে সমাজ, জীবনবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং জাতপাতের সকল সঙ্কীর্ণতা।
বইটি পড়লে বিবিধ বহু জানা অজানা বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।তাই এই মাস্টারপিস বইটা পড়ে না থাকলে এক্ষুণি পড়ে ফেলতে পারেন।

