গল্প:স্মৃতির শহর


 অনুগল্পঃ-

চকচকে রোদ।আসমান জুড়ে সূর্যের কিরণ।সূর্যদেব বোধহয় আজকে একটু বেশিই চকচক রোদ ছড়াচ্ছে।কোথাও কোনো মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই।একদল শালিকের ঝাঁক ডানা মেলে মনের সুখে উড়ে চলছে।আহা! কী দারুণই না দেখতে।আচ্ছা,পাখিদের কি কখনো মন খারাপ হয়?তারাও কি মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলে?যদি এই ঝাঁক থেকে একটা পাখি হারিয়ে যায়!তাহলে কি কেউ হারিয়ে যাওয়া পাখিটাকে খুঁজতে আসবে?নাকি যে যার মতো ছুটতে থাকবে?

তাহলে কি সে পাখিটা খুব একা হয়ে যাবে খুব একা?একদম বিন্দুর মতো একা!


এতক্ষণ লিমন পুকুর ঘাটে বসে বসে এগুলোই ভাবছিলো।আর আকাশের রঙিন সাজের মাঝে উড়ে যাওয়া শালিকের ঝাঁক দেখছিলো।হটাৎ তার মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো।সে নিজেই বুঝতে পারছে না যে হুট করে কেনো তার মনটা এতো খারাপ হলো!ভাবতে লাগলো মন খারাপের কারণ।তার মনে হলো হয়তো পাখির ঝাঁক থেকে একটি পাখি হারিয়ে গেছে।আর তার ভাবনাগুলোও সত্যিই হয়ে যাচ্ছে।তাই তার মনটা খারাপ লাগতে শুরু করছে।


লিমন আবারও আকাশের দিকে থাকালো।দেখলো আকাশের কোথাও শালিকের ঝাঁকের দেখা মিলছে না আর।ঈষাণ কোন বেয়ে একখণ্ড মেঘদের দল আনাগোনা করতেছে।সে কী!মুহূর্তেই সূর্যদেবকে মেঘেরা গিলে ফেলছে।কিছুক্ষণ আগেও যে আসমানটা রোদে চকচক করছিলো সেখানে এখন শুধুই কালো মেঘ।কালো মেঘে ঢেকে গেছে পুরো আকাশ।দেখে মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টি নামবে।প্রকৃতির হিসেব কী অদ্ভুতই না!আমরা খাতা কলমে বহু জটিল অংকের হিসেব সহজেই সমাধান করতে পারি।কিন্তু আমাদের পক্ষে প্রকৃতির অতি সহজ হিসেবটা কস্মিনকালে সমাধান করা বা বুঝা সম্ভব হয়না।প্রকৃতির হিসেব কি খুবই সহজ?নাকি খুব জটিল?প্রকৃতি সহজ নাকি জটিল কিংবা তার হিসেবটাই বা কেমন তা একমাত্র নিয়তিই ভালো বলতে পারবেন।


মেঘেদের দল যতো ঘন হচ্ছে।কালো ছায়া আকাশ জুড়ে ততো ভারী হচ্ছে।বৃষ্টি নামার সব আয়োজন শেষ।এখনই নামবে বৃষ্টি।লিমনের মন খরাপের দিকটাও ঠিক ঐ মেঘেদের মতোই ভারী হয়ে যাচ্ছে।কি করবে সে এখন বুঝতেছে না।বৃষ্টিতে ভিজবে নাকি ঘরে চলে যাবে?দোটানার মধ্যে পড়ে গেলো তার মন।হটাৎ সে শুনতে পেলো এক অদৃশ্য রূপসীর কণ্ঠের আওয়াজ।যে কণ্ঠ থাকে বলছে-এই যে আমার না বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালো লাগে।ইচ্ছে করে বৃষ্টি নামলেই আপনার হাত ধরে ইচ্ছে মতো বৃষ্টিতে ভেজার।তারপর আপনার কোলে মাথা রেখে বৃষ্টি ভেজা আকাশ দেখবো।আর আপনি আমাকে!


অকস্মাৎ আকাশে বজ্র পাতের আওয়াজ হলো।লিমন ভয়ে কেঁপে উঠলো।আর সাথে সাথেই তার মনে হলো এতক্ষণ সে যে অদৃশ্য রূপসীর কণ্ঠে যে কথা গুলো শুনতেছিলো তা আসলে কোনো অদৃশ্য রূপসীর কণ্ঠে বলা কথা না।কথাগুলো ছিলো সত্যি সত্যি এক রূপসীর কণ্ঠে বলা।যে তার পাশে শুয়ে চির জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখতো।আর এইসব ইচ্ছের কথা বলতো।আজ ঠিক তাঁর ইচ্ছের মতোই আকাশে মেঘ জমেছে।আকাশ জুড়ে বৃষ্টির মঞ্চ তৈরী হয়েছে।অথচ সে নেই!সে নেই।কোথাও নেই!গোটা আকাশ জুড়েও নেই।কিন্তু তার কথাগুলো আর ইচ্ছে গুলো আমার হৃদয় জুড়ে।সে কোথায়?সে কি স্মৃতির পাতার "অসমাপ্ত গল্প" হয়ে গেছে!


টিপ টিপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করছে।সাথে লিমনের মনে জমে থাকা মেঘ গুলোও জ্বল হয়ে চোখ বেয়ে বুক গড়িয়ে বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।কোনটি বৃষ্টির জল আর কোনটি চোখের জল কোনোটাই আঁচ করা যাচ্ছে না আর।তবে এটা বুঝতে পারছে যে বৃষ্টির জলে কোনো রঙের খেলা নেই।কিন্তু তার চোখে জলে মধ্যে আছে নীল বেদনার রং।খোলা আকাশের নিচে সে বিন্দুর মতো একা।শালিকের ঝাঁক থেকে একটা পাখি হারিয়ে যাওয়ার মতো হারিয়ে যাওয়া এক মানব।নিত্য নিজেকে খুঁজে বেড়ায়।কতো শতো মানুষ চারপাশে।অথচ কেউ থাকে খুঁজতে আসে না।বড্ড একা সে।


ভাবতে থাকে সারাক্ষণ কারো রেখে যাওয়া অফেরতযোগ্য কিছু স্মৃতি।আর মনে মনে বলে কাউকে ভালোবাসলে পেতেই হবে এমনটা তো না।যারা ভালোবাসার মানুষকে পায় তারা বোধহয় সৌভাগ্যবান শ্রেণির প্রকৃতির সহজ হিসেবের অন্তর্ভুক্ত মানুষ।আর যারা পায়না বরঞ্চ একাকিত্ব সময় কারো স্মৃতির সাথে কথা বলে আর ভেবেনেয় যে একাকিত্ব সময় কারো স্মৃতি লালন করা ভালোবাসা হয়তো।আর এরাই হয়তো প্রকৃতির জটিল হিসেবের জটিল শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত মানুষ!



Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.