মাইগ্রেন কী?কেনো মাইগ্রেন হয়? কী কী তার লক্ষ্যণ?কী তার প্রতিকার?
বিস্তারিত সকল প্রশ্নের জবাব পেতে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে।
প্রথমে জানতে হবে মাইগ্রেন জিনিসটা আসলে কী?
মাইগ্রেন এক বিশেষ প্রকারের মাথাব্যথা।এই ব্যথা মাথার যেকোনো প্রান্ত থেকে শুরু হতে পারে।আবার কখনো কখনো পুরো মাথা জুড়ে ব্যথার অনুভব হতে পারে।যখন এই ব্যথা মাথায় ধরে তখন মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনী গুলো থাকে তা মাথা ব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়।মাথা ব্যথার সাথে সাথে বমি বমি ভাবও হতে পারে এবং অনেক সময় রোগীর দৃষ্টিবিভ্রমও হয়।মূলত এটাকেই Migraine বা মাথা ব্যথা বলা হয়ে তাকে।
এখন জানতে হবে যে সব ধরনের ব্যথাই কী মাইগ্রেন?
সকল মাথা ব্যথাই যে মাইগ্রেনের ব্যথা তা নয়।দৃষ্টিস্বল্পতা,মাথায় টিউার বা মাথায় অন্য সমস্যা থাকার কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে।মাইগ্রেন এক ধরনের মাথা ব্যথা যার নিয়মিত চিকিৎসা করলে আরোগ্য পাওয়া সম্ভব।আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা উচিত যে চোখে কোনো সমস্যা থাকার কারণে কখনো মাথা ব্যথা হয় না।
মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা কেনো হয়?বা কাদের বেশি হয়ে থাকে?
মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা কেনো হয় এর সঠিক ব্যাখ্যা এখনো মেডিক্যাল সাইন্স দিতে পারেনি।তবে অনেক সময় এটা বংশগত কারণে হয়ে থাকে।আবার অজ্ঞাত কারণেও হয়ে থাকে।
মাইগ্রেন সাধারণত পুরুষের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।তাছাড়া অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা,অতিরিক্ত ভ্রমণ,অনিদ্রা,দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহার,মোবাইল ফোনে লাগাতার কথা বলার ফলেও মাইগ্রেন হয়ে থাকে।মানসিক চাপ,দুশ্চিন্তা,উজ্জ্বল আলো এই ব্যথা বাড়াতে সচেষ্ট।
মাথা ব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘন্টা এমনকি অনেক দিন পর্যন্তও স্থায়ী থাকতে পারে।এই ব্যথার বিশেষ লক্ষণ হলো,মাথা ব্যথা,বমি ভাব।তাছাড়াও অলসতা,কেনো কাজে মন না বসা,কোনো কিছুতে বিরক্তবোধ করা বা হওয়াও এর লক্ষণ হতে পারে।
এসব লক্ষণ মাথা ব্যথা শুরু আগেও হতে পারে।মাথার যে কোনো সাইড থেকে এ ব্যথা শুরু হয়ে পুরো মাথায় ছড়িয়ে যে পারে।কখনো কখনো চোখের পিছন দিকে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।অতিরিক্ত শব্দ এবং আলোর ফলে মাথা ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
যেসব জিনিস মাইগ্রেন ব্যথাকে উপশম বা প্রতিকার করে তুলতে পারেঃ
ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবার এই ব্যথাকে উপশম করতে বেশ কার্যকর ভুূমিকা রাখে।কিছু ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবারের নাম,ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত,আলু ও বার্লি এসব এই ব্যথা নিরাময়ের অন্যতম প্রতিষেধক।
এছাড়াও নিয়মিত শাকসবজি,বিভিন্ন ফলমূল বিশেষ করে খেজুর ও ডমুর এই ব্যথা উপশমে কার্যকরি ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়াম মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।তিল,আটা ও বিটে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।এগুলো খেলে এই ব্যথা উপশম হতে পারে।
আদার টুকরো বা রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
যেসব খাবার মাইগ্রেন হলে খাওয়া অনুচিত বা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়ঃ
আমরা অনেক সময় মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা হলে চা-কফি খাই।কিন্তু মাইগ্রেনের সময় এগুলো খাওয়া উচিত নয়।আইসক্রিম,কোমলপানিয়,দুধ,দই,মাখন,কলা
আপেল,পেয়াজ,চিনাবাদাম ও টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তি বিশেষ খাবারের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।তাই আপনি যদি মাইগ্রেন ব্যথায় ভুগে থাকেন তবে আপনি নিজে নিজেই খাবারের উপর একটা এক্সপেরিমেন্ট করে নিন।নোট করে রাখুন যে কোন কোন খাবার আপনার ব্যথা বাড়ায় এবং কমায় তা নিজেই বুঝতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করলে দ্রুত আরোগ্যলাভ সম্ভব।তবে ব্যথা খুব বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই উত্তম।
মাইগ্রেন থেকে দ্রত মুক্তি পেতে কিছু বিষয় অবশ্যই করনীয়ঃ
মাইগ্রেন চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে তাড়াতাড়ি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
কড়া রোদে বা তীব্র ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে হবে।
আবার খুব কম আলোতে কোনো কাজ না করা।
কোলাহল পূর্ণ বা হৈচৈ পূর্ণ জায়গা বেশিক্ষণ না থাকা।
অতিরিক্ত সময় কম্পিউটার বা টিভির সামনে থাকবেন না।
ব্যথা শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
আপনার হাত এবং পা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।মাথার পিছন দিকে একটি কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বেধে রাখুন বা দিয়ে রাখুন।এ পদ্ধতি আপনার মাথা থেকে রক্তচাপ কমিয়ে মাথা ব্যথা দ্রুত উপশম করতে কার্যকরি ভূমিকা রাখবে।
