মালিক মুভি রিভিউ;Malik movie Review:
মালায়লাম ইন্ড্রাস্ট্রিতে ফাহাদ ফাসিল কী নিদারুণ অভিনয় করে থাকেন তা কারই-বা অজানা।
সদ্য মুক্তি পেয়েছে ফাহাদ ফাসিলের "মালিক" সিনেমাটি।"অদ্বিতীয় প্লাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে" মুক্তি প্রাপ্ত এই মুভিটি দারুণ সাড়া ফেলেছে দর্শকের মনে।পাশাপাশি সমালোচকরাও সিনেমাটিকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
তাহলে চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক সিনেমাটির রিভিউ ও বিশ্লেষণ..
![]() |
| Malik |
মালিক সিনেমাটিকে ধরা হচ্ছে এই মুহূর্তের সেরা সিনেমা।এমন অসাধারণ ছবি শুধু মালায়লাম ইন্ড্রাস্ট্রির পক্ষেই সম্ভব।মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধকে এভাবে তাও ভারতীয় সিনেমায় ধারণ করার সাহস ইতিপূর্বে বোধহয় কেউই করেনি।বলা হচ্ছে ফাহাদ ফাসিলের ক্যারিয়ার সেরা মুভি এটি।
সিনেমার শুরুতেই অডিয়েন্সরা পরিচিত হয় "আহমদ আলী সুলেমানের" সাথে।যে চরিত্রটিতে ফাহাদ ফাসিল অভিনয় করেছেন।পুলিশের চোখে তিনি গ্যাং স্টার মাফিয়া সর্দার।রাজনীতিবীদদের কাছে তিনি উপদ্রুবের মতো।কিন্তু জন সাধারণ মানুষের কাছে তিনি একজন ফেরেশতার মতো।এলাকার সকলেই মনে করে যে সে একজন চালাক ব্যক্তি।এমনকি তারা এটাও জানে যে তাদের যেকোনো বিপদে সুলেমান তাদেরকে সাহায্য করবে।এমনকি নিজের জীবনের বিনিময় হলেও সে তাদেরকে সহযোগিতা করবে।তাই তারাও সুলেমানের জন্য জীবন দিয়ে হলেও যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত।
সিনেমাটিতে নিজের এলাকায় সুলেমানের খুবই প্রভাব থাকে।যে তার নামে টেরোরিস্টের মামলা থাকলেও তাকে গ্রেফতার করার সাহস করতে পারে না পুলিশ।
সুলেমানের প্রবল ইচ্ছে থাকে হজ্জ করার।কিন্তু তার উপর বহু বিষয়ে মামলা রয়েছে ফলে সে এলাকা থেকে বের হলেই পুলিশ তাকে ধরে ফেলবে।এমন আশংকা নিয়েই সে বের হয়ে যায় হজ্জ যাত্রার উদ্দেশ্যে।কিন্তু এয়ারপোর্টেই পুলিশ থাকে ধরে ফেলে।তাকে নেওয়া হলো কারাগারে।এখন জেলে কী হবে?এক সময়কার প্রতাভশালী সুলেমান যার নাম শুনলে মানুষরা ভয়ে তর তর করে কাঁপতো।সে কী মুক্তি পাবে জেল থেকে?
এদিকে স্থানীয় এমপি,রাজনীতিবীদসহ পুলিশেরও দুচোখের বিষ সুলেমান।সবাই চায় তাকে জেলের মধ্যেই হত্যা করা হোক।এতে করা এটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে জন মহলে।ফলে সুলেমান থেকে মুক্তি মিলবে সহজেই।
শুরু হয় তাকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের জাল বুনা।তবে কি সুলেমানকে শেষ করে দেওয়া এতোই সহজ হবে?যাকে কিনা ইতিপূর্বে বহুবার মেরে ফেলার চেষ্টা করেও মেরে ফেলা যায়নি।যাকে জেলের মধ্যে অনেকবার নিয়ে গিয়েও আটকে রাখা সম্ভব হয়নি।আর সেই ব্যক্তিকেই কিনা জেলের মধ্যে হত্যা করা হবে!
কে হত্যা করবে সুলেমানকে?এখানকার সবাই তো তার সন্তানের মতো।যাদের সকলকেই সে আশ্রয়াগার গড়ে দিয়েছে।জাহাজ থেকে নেমে আসা বর্জের উপরই এই এলাকাকে তৈরী করেছে সুলেমান।মানুষের বসবাসের মতো পরিবেশ সে সৃষ্টি করে দিয়েছে।এসব বহুবিধ দিক নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে "মালিক" সিনেমার গল্প।
গল্পের বা সিনেমার এক প্রান্তে উঠে আসে সুলেমানের ভয়ানক অতীতের কথা।তার জন্ম,মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার মতো কাহিনী।অন্যায়ের প্রতিবাদ করা,এক পর্যায় সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়া এসব কথক বিষয়।এক কথায় সুলেমানের গোটা জীবন কাহিনী ভেসে উঠে পর্দায়।এসব জানার পর একটা বারও মনে হয়নি যে সুলেমান একজন খারাপ ব্যক্তি ছিলো।বরং মনে হয় তার নিজের এলাকার মানুষের ও ধর্মের প্রতি ছিলো গভীর ভালোবাসার ছাপ।
দর্শকরা পরিচিত হয় সুলেমানের সাথে থাকা অন্যান্য সঙ্গীদের সাথে।এদের মধ্যে একজনের নাম 'ডেভিড' যে কিনা সুলেমানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো।সিনেমার এক ফাঁকে ডেভিডের বোনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় সুলেমান।
সুলেমান চায় তার প্রেমিকাকে বিয়ে করতে।কিন্তু পরিবার তাতে অমত করে।ফলে ডেভিড তার বোনকে সুলেমানারে হাতে তুলে দেয়।
সুলেমানের সঙ্গী থাকে আবু নামে একজন।যে একজন স্বার্থপর এবং সুযোগসন্ধানী মানুষ।সে ষড়যন্ত্রের জাল তৈরী করে ডেভিড ও সুলেমানের মধ্যে।ফলে দূরত্বের সৃষ্টি হয় দুই বন্ধুর মাঝে।এমনকি আবুর ষড়যন্ত্র এতোই জঘন্য হয় যে এলাকায় দাঙ্গা বেধে যায় খ্রিষ্টান আর মুসলমানদের মধ্যে।সুলেমান মনে করে দাঙ্গার জন্যদায়ী ডেভিডই।অপরদিকে ডেভিড মনে করে এই দাঙ্গার মূলহুতা সুলেমান।এভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দুই বন্ধু পরিনত হয় চরম শত্রুতে।
এদিকে ডেভিডের ছেলেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যে সুলেমানকে জেলে গিয়ে হত্যা করার।তাহলে কি এই আপন মানুষ কি পারবে তার ফুফাকে জেলে গিয়ে খুন করতে?
এসব প্রশ্নের জবাব পেতে হলে দেখতে হবে এই টানটান উত্তেজনায় ভরপর "মালিক" সিনেমাটি।মুভিটি দেখতে বসলে একের পর এক ক্লাইম্যাক্স দেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন অন্য জগতে।তাই এখনো এই চমৎকার শ্বাসরুদ্ধকর সিনেমাটি দেখে না থাকলে এক্ষুনি দেখে ফেলুন।
